তোমরা আমার জ্যান্ত মেয়েকে (সাজেদা-ই-বুলবুল) এনে দাও। যদি না পার, তবে মরদেহ এনে দাও। আমার মা’র টুকরো লাশ বুকে নিয়ে আমি ঘুমাব। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে খুন হওয়া পটুয়াখালীর গৃহবধূ সাজেদা-ই-বুলবুল (২৯) এর বাবা-মা তাদের মেয়ের মরদেহ পেতে এমন আহাজারি করছেন। স্বামীর হাতে নির্মমভাবে খুন হওয়া বুলবুলের মরদেহ দেশে আনতে তার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। গত ৫ জুলাই মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পটুয়াখালীর মেয়ে সাজেদাকে তার স্বামী শাহাজাদা ৭ টুকরা করে খুন করে।
জানা গেছে, নিহত বুলবুল পটুয়াখালী সরকারী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, সরকারী মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি, প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও এলএম পাস করেন। পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ সুবিদখালীর ঘটকের আন্দুয়া এলাকার সোহরাফ ফকিরের ছেলে শাহজাদা সাজুর সঙ্গে ২০০৪ সালের ২৫ এপ্রিল বিয়ে হয় বুলবুলের। তাদের সংসারে মুগ্ধ (৭) কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পরে বাংলাদেশ থাকাকালীন বুলবুলকে নির্যাতন করায় স্বামী শাহজাদার বিরুদ্ধে শাহ আলী থানা ডিএমপি ঢাকায় একটি এজাহারও দায়ের করেন তিনি। এরপরে তাকে ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় নিয়ে যায় ঘাতক শাহজাদা। নিহত বুলবুলের বোন খাদিজা পারভিন উপমা জানান, উচ্চতর পড়াশোনা করার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৬ সালের ৩ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ায় নিয়ে যান তাকে।
কিন্তু সেখানে ঘাতক শাহজাদা প্রতিষ্ঠিত হলেও তার স্ত্রীকে স্থায়ীভাবে বসবাস করার সুযোগ তৈরি করে দেননি। সেখানেও নিয়মিত নির্যাতন করা হতো তার বোনের ওপর। তাকে দুই-তিন দিন পর পর খাবার দেয়া হতো। এসব ঘটনা বুলবুল তার বাবা-মাকে মাঝে মাঝে জানাত। এক পর্যায়ে বুলবুলের ওপর অমানুষিক নির্যাতন শুরু করেন শাহজাদা। বাংলাদেশ থেকে নির্যাতনের জন্য শাহজাদাকে উস্কে দিতেন তার মা, বোন, মামাসহ অন্যরা। খাদিজা পারভিন উপমা আরও জানান, শাহজাদার নির্যাতন সইতে না পেরে এক আত্মীয়ের বাসায় পালিয়ে যান বুলবুল। সেখানে ২-৩ দিন থাকার পর শাহজাদা তার কাছে ক্ষমা চেয়ে পুনরায় তাকে নিজ ঘরে ফিরিয়ে আনেন। এর পর পরই নৃশংস খুনের শিকার হন বুলবুল। ঘাতক শাহজাদা নৃশংসভাবে খুনের পর বুলবুলের মরদেহ একটা লাগেজে ভরে জঙ্গলে ফেলে দেন। সেখান থেকে মালয়েশিয়া পুলিশ লাগেজ ভর্তি মরদেহ উদ্ধার করে।
সূত্রঃ জনকন্ঠ